হাওজা নিউজ এজেন্সি: সাংস্কৃতিক ও সামাজিক গবেষক হামিদ তাকদিরি একটি নিবন্ধে লিখেছেন, বাগদাদে মসজিদের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরা তাকে আকা মুস্তাফা সাদরযাদের স্মরণ করিয়েছে। ক্রীড়া কার্যক্রম থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সামাজিক উৎসব—সবকিছুই বিপ্লবের আগামী প্রজন্ম গঠনের উপযুক্ত সুযোগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যখন মসজিদ নিজেই শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে, তখন তা বরকতপূর্ণ হয়ে ওঠে; শহীদদের ধারাবাহিকতা ও সম্মান একে বিশেষ মর্যাদা দেয়।
বাগদাদে প্রবেশ করার সময় লেখকের অন্তরে এক অচেনা আবেগ জাগে। চারপাশে শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর ত্যাগের প্রভাব স্পষ্ট। তিনি একটি ধর্মীয় বিদ্যালয়ে পৌঁছান—যেখানে সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভী কেবল প্রশাসক হিসেবে ছিলেন না; তিনি জানতেন, এখানে ইসলামের প্রকৃত কমান্ডার গড়ে তোলা হবে। তিনি কখনও ভাবেননি বাগদাদ মানচিত্রে বড় করে দেখা যায় কি না, বা একটি সাধারণ বিদ্যালয় কতটা প্রভাব ফেলতে পারে; বরং তিনি ছাত্রদের বিকাশে যতটা সম্ভব সময় ও মনোযোগ দিতে বিশ্বাসী ছিলেন।
তিনি তখনও জানতেন না যে হিজবুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ নেতা শহীদ আব্বাস মুসাভী ও শহীদ নাসরুল্লাহরা এই সাধারণ বাগদাদি বিদ্যালয় থেকেই বিশ্বমঞ্চে উঠে আসবেন। তবুও, তিনি মানুষ গঠনের পথ ও শিখরের দিকে পৌঁছানোর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতেন।
নতুন প্রজন্ম ও নেতৃত্বের গুরুত্ব
২০১৯ সালের খবরগুলো দেখলে বোঝা যায়, শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ তাঁর বাড়ি ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-কে উৎসর্গ করেছিলেন। এর অর্থ, হিজবুল্লাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নতুন কিশোর ও যুবকদের চেতনা, জ্ঞান-দক্ষতা, আত্মত্যাগী মনোভাব এবং নৈতিক শিক্ষায় প্রস্তুত করা। শহীদ নাসরুল্লাহ বারবার ইমাম খোমেনির উক্তি স্মরণ করেছেন—“মহা বিজয় হলো যুবক ও কিশোর বিপ্লবীদের গঠন করা।”
লেখক বলেন, তিনি কল্পনা করেছেন কিভাবে বৈরুতের ক্রীড়া মাঠে ৭০,০০০-এরও বেশি কিশোর ও যুবকের এক বৃহৎ স্কাউট মিছিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি শহীদ নাসরুল্লাহর ছবি সামনে নিয়ে ভাবেন—“কমান্ডার কোথায়? দেখো, কত নাসরুল্লাহ ইমাম মাহদীর (আ.ফা.) পথের রক্ষায় তৈরি হয়েছে। তুমি চাইলে শুধু লাইব্রেরি ও নিঃসঙ্গতা বেছে নিতে পারতে; কিন্তু তুমি জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে জিহাদ ও মাঠকে নিজের শিক্ষা-ক্ষেত্র বানাতে চেয়েছিলে—কত সুন্দরভাবে তুমি এক প্রজন্মকে ধাপে ধাপে গড়ে তুলেছ।”
বিশ্বাস, প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগ
লেখক দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছেন, তিনি মাঠভিত্তিক শিক্ষা ও চর্চায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। প্রতিদিন সকালে ও রাতে তিনি খোদার কাছে প্রার্থনা করেন, “হে আমার প্রভু, এই পথ কতো অসাধারণ! আমাদের হৃদয় উজ্জ্বল, আমাদের ইচ্ছাশক্তি দৃঢ়—তবু আমাদের সামর্থ্য সীমিত।”
তিনি বলেন, প্রতিটি ভাল বই, নেতার প্রতিটি বাণী, প্রতিটি সফর এবং অভিজ্ঞতা যেন যুবকদের জন্য কাজে লাগানো যায়। তার ইচ্ছে ছিল, যদি একটি বিমান থাকত, তিনি দেশভেদে ঘুরে দেখাতেন—কতটা পরিশ্রম করতে হবে যাতে বিপ্লবী ভাবধারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়।
লেখক আশাবাদী যে, এই স্কাউট ও যুবসমাজই ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর সৈন্য হবে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, এই প্রজন্মের মধ্যেই লেবাননের প্রতিরোধ ও ইসলামের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে।
বাগদাদ থেকে তেহরান; তেহরান থেকে বৈরুত—পথটি একই: বিপ্লবের নতুন প্রজন্ম গঠনের পথ অব্যাহত। এই পথে যুবকরা আত্মবিশ্বাস, নৈতিকতা, ঈমান ও আত্মত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তুলবে, যাতে ইসলামের আদর্শ ও ইমাম মাহদীর (আ.ফা.) পথ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়।
আপনার কমেন্ট